আল্লাহ্ (আরবি: الله) একটি আরবি শব্দ, ইসলাম ধর্মানুযায়ী যার দ্বারা "বিশ্বজগতের একমাত্র স্রষ্টা এবং প্রতিপালকের নাম" বোঝায়। "আল্লাহ" শব্দটি প্রধানতঃ মুসলমানরাই ব্যবহার করে থাকেন। মূলতঃ “আল্লাহ্” নামটি ইসলাম ধর্মে বিশ্বজগতের সৃষ্টিকর্তার সাধারণভাবে বহুল-ব্যবহৃত নাম; এটি ছাড়াও মুসলমানরা তাকে আরো কিছু নামে সম্বোধন করে থাকে যেমন খোদা। মুসলমানদের ধর্মগ্রন্থ কোরআনে আল্লাহর নিরানব্বইটি নামের কথা উল্লেখ আছে; তার মধ্যে কয়েকটি হল: সৃষ্টিকর্তা, দয়ালু, বিচারদিনের মালিক, খাদ্যদাতা,অতিদয়ালু, ক্ষমাকারী, বিশ্বজগতের মালিক প্রভৃতি।
তবে আরব দেশের খ্রিস্টানরাও সৃষ্টিকর্তাকে বুঝাইতে প্রাচীনকাল থেকে "আল্লাহ" শব্দটি ব্যবহার করত। বাহাই, মাল্টাবাসী, মিজরাহী ইহুদি এবং শিখ সম্প্রদায়ও "আল্লাহ" শব্দটি ব্যবহার করত।
আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন, আল্লাহ তা'আলার আসমাউল হুসনা (সুন্দরতম নামসমুহ) হলো মোট ৯৯ টি| আল্লাহ তা'আলা তোমাদেরকে এ সকল নামের মাধ্যমে তার নিকট দোয়া প্রার্থনা করতে আদেশ করেছেন। যে ব্যক্তি আল্লাহ্র এ গুণবাচক ৯৯টি সুন্দর নাম মুখস্হ করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে| অন্য এক বর্ণনায় আছে, 'যে ব্যক্তি ৯৯টি গুণবাচক নাম মুখস্থ করবে এবং সর্বদা পাঠ করবে (আমল করবে), সে অবশ্যই বেহেশতে প্রবেশ করবে|' ---সহীহ মুসলিম।
আল্লাহ শব্দটি নিয়ে গবেষনা করে ইসলামী স্কলারেরা এর একাধিক অর্থ বের করেছেন। খুব অল্প কিছু সংখ্যক স্কলার মনে করেন – আল্লাহ শব্দের কোন অর্থ নাই, এটা শুধুই একটা নাম। তবে বেশীরভাগ স্কলারই আল্লাহ শব্দের বিভিন্ন অর্থ বের করেছেন, যার প্রত্যেকটির পেছনেই কোন না কোন প্রমাণ ও যুক্তি আছে। নিচে আল্লাহ শব্দের কিছু অর্থ তুলে ধরা হলো। অর্থগুলি সাংঘর্ষিক নয় সম্পূরক, কাজেই এর সবগুলিই সঠিক হতে পারে।
প্রথম মতামত হলো – আল্লাহ শব্দটি ওয়ালিহা থেকে এসেছে। ওয়ালিহা শব্দের একটি অর্থ হলো – হতবাক, বিস্মিত হয়ে যাওয়া। কারণ, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার শক্তি, ক্ষমতা, দয়া ও বৈশিষ্ট্য নিয়ে চিন্তা করতে গেলে আমরা বিস্মিত, বিমোহিত হয়ে যাই। ওয়ালিহা শব্দের আরেকটি অর্থ হলো – প্রাণপ্রিয় কাউকে হারানোর শোকে পাগলপ্রায় হয়ে যাওয়া। যেমন – যে মা তার সন্তান হারানো বেদনায় কাতর হয়ে থাকে তাকে আরবীতে মুয়াল্লাহ বলা হয়। একইভাবে, যে ব্যক্তি সারাজীবনে আল্লাহকে চিনতে পারলো না সে তার মৃত্যুর সময় এবং পরকালেও আল্লাহকে না পাওয়ার বেদনায় পাগলের মত হয়ে যাবে।
দ্বিতীয় মতামত হলো – আল্লাহ শব্দটি এসেছে আলাহা থেকে। আলাহা অর্থ হলো আশ্রয় প্রার্থনা করা। এই পৃথিবীতে আমরা সবাই আল্লাহর আশ্রয়ের উপর নির্ভরশীল। এই পুরো মহাবিশ্ব আল্লাহর, আমাদের দেহ-প্রাণ আল্লাহর দান, মহান রব্বুল আলামিন আমাদের শ্বাসযন্ত্রকে চলতে হুকুম না দিলে সে অক্সিজেন টানত না, হস্তদ্বয়কে মুষ্ঠিবদ্ধ করার শক্তি না দিলে সে ধরতে পারতো না, পা কে চলার শক্তি না দিলে সে চলতে পারতো না। আমরা যখন আল্লাহর বাধ্যতা করি এবং এমনকি যখন আল্লাহর অবাধ্যতাও করি – আল্লাহ না চাইলে তার কিছুই হতো না। এভাবে, আমাদের সব কাজ সম্পাদনের জন্য আমরা প্রত্যক্ষ্য বা পরোক্ষভাবে আল্লাহর আশ্রয় খুঁজে বেড়াই। আলাহা শব্দের দ্বিতীয় অর্থ হলো – প্রশান্তি অনুভব করার উদ্দেশ্যে কোথাও স্থির হয়ে থাকা। কারণ, আল্লাহর স্মরণে একজন মু’মিন অন্তরে যে প্রশান্তি পায়, তা আর অন্য কোন কিছুতেই মিলবে না।
তৃতীয় মতামত হলো – আল্লাহ শব্দটি এসেছে “লা-হা ইয়ালিহু” থেকে যার অর্থ হলো মর্যাদার উন্নয়ন করা। যে ব্যক্তি আল্লাহ বিশ্বাস করে সে ইহকালে ও পরকালে – দুই জগতেই সম্মানিত হবে।
চতুর্থ মত হলো – "আল্লাহ" শব্দটি এসেছে “আলিহা ইয়াঅ লাহু বিমা’না ‘আবাদা ইয়া’বুদু” হতে, যার অর্থ হলো –“ সেই সর্বোচ্চ অস্তিত্ব একমাত্র যিনি সকল উপাসনা পাওয়ার জন্য উপযুক্ত”। বিশিষ্ট সাহাবী ইবনে আব্বাস(রাঃ) হতে আরবী ভাষার পন্ডিত সিবাওয়ে, ইবনে ফারিস সহ বেশীরভাগ স্কলারের মতে এটাই সবচেয়ে সঠিক মতামত। এটি এমন একটি অর্থ – যা আল্লাহ সকল গুনবাচক নামকে ধারণ করে।
আমরা যখন আল্লাহর ইবাদাত করি তখন আমরা তার প্রশংসা করি, তার কাছে নিজের ইচ্ছে গুলো পোষণ করি। অনেক কিছুর আবদার করি।
আমাদের এই সব চাওয়া প্রমাণ করে যে,
তিনি ইলাহ (উপাস্য),
তিনি সামি’ (যিনি শুনেন),
তিনি বাসির (যিনি দেখেন),
তিনি রহিম (প্রতি মূহুর্তে দয়ালু),
তিনি আজিম (পার্ফেক্ট)।
এর জন্যই সূরা আ’রাফের ১৮০ নং আয়াতে মহান রব্বুল আলামিন বলেছেন – “সবচেয়ে সুন্দর নামগুলো তো আল্লাহরই, কাজেই তোমরা তাকে সেইসব নাম ধরে ডাকো”।