মসজিদের আদব পর্ব 1

বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম।
মসজিদ হলো আল্লাহর ঘর। পবিত্র আল কুরআনে আল্লাহপাক ঘোষণা দিয়েছেন: মসজিদসমূহ আল্লাহরই জন্য। ইসলামের পাঁচটি খুঁটির দ্বিতীয়টি হল সালাত। আর এই সালাত আদায়ের স্থান হল মসজিদ। মসজিদ হল পবিত্র এবং আল্লাহর প্রিয়। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: আল্লাহর নিকট সবচেয়ে প্রিয় স্থান হল মসজিদ এবং সর্ব নিকৃষ্ট স্থান হল বাজার। 
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হিজরত শেষে সর্বপ্রথম মসজিদ নির্মাণের দিকে মনোনিবেশ করেন। আমরা বিভিন্ন সময় সালাত এবং নানাবিধ কারণে মসজিদে গমন করি। মসজিদ এবং এর আশেপাশে অবস্থান রত অবস্থায় মসজিদের কিছু আদব মেনে চলতে হয়। আর মুসলমান হিসেবে আমাদের এই আদব গুলো সম্পর্কে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। 
মসজিদের আদব গুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো মসজিদে নিচু স্বরে কথা বলা। মসজিদে কখনো উচ্চস্বরে কথা বলবেন না। যদি সেটা সালাত আদায়ের সময় নাও হয় তবুও নিম্ন স্বরে কথা বলবেন। মসজিদে মানুষ ছাড়াও ফেরেস্তা এবং জ্বীনরা আল্লাহর ইবাদত করে থাকে যা থেকে আমরা দেখতে পাই না। উচ্চস্বরে কথা বলে তাদের ইবাদতে ব্যাঘাত ঘটে। এর চেয়েও বড় বিষয় হলো আমরা কোন বিশিষ্ট মানুষ কিংবা সম্মানীয় কোন মানুষের সামনে অবস্থান করি তখন আমরা খুব নিচু স্বরে কথা বলি। আনিছি সঙ্গে কথা বলি সেই ব্যক্তিকে সম্মান দেখানোর জন্য। তাহলে এবার ভাবুন আপনি সমস্ত সৃষ্টিকুলের মালিক একমাত্র স্রষ্টা আল্লাহর ঘরে অবস্থান করছেন আপনার কি উচ্চস্বরে কথা বলা উচিত! যখন আমরা মসজিদের চার দেয়ালের মাঝে কিংবা এর পার্শবর্তি স্থানে অবস্থা ন করি তখন  আমাদের উচিত মসজিদে এতটাই নিম্নস্বরে কথা বলা যেন আমার কণ্ঠস্বর পাশের ব্যক্তি ছাড়া দুই হাত দুরে দাঁড়িয়ে আছে এমন কেউ ও শুনতে না পায়। 
মসজিদের আদবের মধ্যে অন্যতম হলো মসজিদে ধীরগতিতে চলাফেরা করা। দ্রুত পায়ে হাঁটলে পায়ের চলাচলের শব্দ হয় যার ফলে ইবাদতরত ব্যক্তিদের অসুবিধা হয়। তাই মসজিদে সর্বদা চেষ্টা করবেন ধীরগতিতে হাঁটার জন্য।
অনেকে আছে মসজিদে ঢোকার পরে মসজিদের জানালা দিয়ে থুথু কফ ইত্যাদি বাহির দিকে ছুড়ে মারেন। এ কাজ কখনো করা যাবে না। মসজিদের আশেপাশে পবিত্র ফেরেশতা এবং ভালো জিনেরা ঘোরাফেরা করেন। এছাড়াও মসজিদের আশেপাশের পরিবেশ আপনার ছোট এবং কফ এর দ্বারা অপরিচ্ছন্ন হয় এবং রোগ জীবাণু ছড়াতে থাকে। যদি একান্তই থুতু এবং কফ ফেলতে হয় তাহলে ওযুর স্থান ব্যবহার করুন। 
মসজিদে পাশের ব্যক্তি কিংবা একসঙ্গে অনেকে দলবদ্ধভাবে বসে গল্প গুজব তথা দুনিয়াবী কথাবার্তা এবং জোরে হাসাহাসি করা যাবে না। মসজিদ দুনিয়াবী কথাবার্তা বলার স্থান নয়। আপনার ছোট্ট কথা কিংবা হাসির শব্দে কাছে কিংবা দূরবর্তী স্থানে ইবাদতরত কোন ব্যক্তির কিরাত পড়তে সামান্যতম ভুল হয় তাহলে তার পাপের ভাগিদার বহুলাংশে আপনিও হবেন। তাই অন্যের অসুবিধা করে জমায়েত রত অবস্থায় গল্পগুজবের মত্ত হবেন না।
অনেক সময় ফরজ এবং সুন্নত নামাজের পর মসজিদে জমায়েত হয় তাবলীগী আলোচনা করা হয়। আলহামদুলিল্লাহ অবশ্যই খুব ভালো কাজ। অনেকে সালাত আদায় করে মসজিদে বসে কোরআন তেলাওয়াত করেন। কিন্তু কোনো ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গ আপনার নিকটস্থ স্থানে কিংবা খানিক দূরবর্তী স্থানে নামাজ রত অবস্থায় থাকে তাহলে সে ক্ষেত্রে উক্ত ব্যক্তির সালাত আদায় সমাপ্ত হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে কিংবা বেশ খানিকটা দূরবর্তী স্থানে গিয়ে তাবলীগী আলোচনা কিংবা কুরআন তেলাওয়াত করতে হবে যেন উক্ত ব্যক্তির সালাতে ন্যূনতম ব্যাঘাত না ঘটে।

মসজিদে অনেক সময় ছোট বাচ্চাদেরকে নিয়ে গেলে তারা কান্নাকাটি করে কিংবা হাসাহাসি করে। এমন অবস্থায় আশেপাশের আমরা যারা থাকি তারা অনেকেই তাদেরকে থামতে বলার জন্য হইচই করে উঠি। কিন্তু তা মোটেও করা যাবে না। কাউকে কোন কিছু নিষেধ করতে হলে তা অবশ্যই ইশারাই দেখাতে হবে। আর ছোট শিশুরা দুষ্টামি করলে তাকে যদি ধমক দেয়া হয় তাহলে সে মসজিদ বিমুখ হয়ে যেতে পারে। তাই তাকে সুন্দর ভাবে বুঝিয়ে হাসিমুখে ইশারায় দুষ্টামি না করার অনুরোধ করতে হবে কিন্তু ধমক কিংবা ভয় দেখানো যাবে না। 
মসজিদের আদব গুলোর মধ্যে আরেকটি অন্যতম বিষয় হলোঃ
অজু করে এসে ভেজা পায়ে অথবা বাহির থেকে এসে সরাসরি কাতারের যে স্থানে সিজদা দেওয়া হয় সে স্থানে দাঁড়ানো যাবে না কেননা আপনার পায়ের ভেজা পানি সিজদার স্থানে লেগে থাকলে ওই স্থানে যিনি সালাত আদায় করবেন তার জন্য সিজদা দেওয়া কষ্টকর হবে এবং কেউ বাহির থেকে আসার পরে কিংবা মোজা পরিধান করার পরে সেই স্থানে দাঁড়ালে তার পা হতে এক ধরনের আঁশটে গন্ধ সিজদার স্থানে তৈরি হয় এবং এটিও ওই স্থানে যিনি সিজদা দিবেন তার জন্য বেশ কষ্টকর হবে। তাই সিজদার স্থানে পা ফেলা কিংবা দাঁড়িয়ে থাকা থেকে আমরা যতটা সম্ভব  বিরত থাকার চেষ্টা করব ইনশা আল্লাহ।
মসজিদে বিভিন্ন সময় ফরয সালাত আদায়ের সময় নিয়ে সমস্যা সৃষ্টি হয়। কিন্তু তাই বলে 12 মিনিটের জন্য অপেক্ষা না করে আমরা ইমাম মুয়াজ্জিন কিংবা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করি যা মোটেও কাম্য নয়। ফরয সালাত আদায় বিলম্ব হলে আমরা ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করবো অথবা ইমাম কিংবা মুয়াজ্জিন কে নিম্নস্বরে সুন্দরভাবে বিলম্বের কারণ জিজ্ঞেস করবো।
 মসজিদের এই আদব গুলো আমরা সুন্দর ভাবে মেনে চলার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ। 
Previous Post Next Post